।। শুভ চতুর্থী ।।
যাই হোক। কালকের লেখাটার পরে আজ তাহলে লিখি পুজোর প্রথম বদলের প্রসঙ্গে। ছোট্টবেলার পুজো টা একইরকম কেটেছিল এই ক্লাস থ্রী - ফোর অব্দি। মানে যেটার ব্যাপারে কাল লিখলাম আরকি। তারপর একটা বদল এসেছিলো আর সেটা চলেছিল পুরো স্কুল পড়াকালীন অব্দি। বদলটার একটা অন্যতম কারণ ছিল আমাদের ঠিকানার পরিবর্তন। হ্যাঁ, দুঃখের ঘটনা ছিল বটে কারণ, প্যান্ডেলের চূড়া দেখাটা বন্ধ হয় গেছিলো আমার আর দিদিভাই এর। কিন্তু এই নতুন পুজোর গন্ধ টাও বেশ মজার ছিল। তখন একটা নতুন সংযোজন হয়েছিল এই আসন্ন পুজোর গন্ধে। আমাদের দুই বোনকে নিউ মার্কেট নিয়ে গিয়ে পছন্দ মতন পুজোর জামা কিনে দেয়ার নতুন রীতি , আর সেটা সেই যে শুরু হয়েছিল আর থামেনি। ছোট্টবেলাতে মা নিয়ে আসতো , আমরা শুধু প্যাকেট খুলতাম। এবার দোকানে গিয়ে এটা ওটা চাই বলার একটা সুন্দর সুযোগ করে দিয়েছিলো মা, পাপা। তা, এই পুজো আসার এক দেড় মাস আগে থেকে যখন শুনতাম কোনো ছুটির দিন মা, পাপা প্ল্যান করছে পুজোর জামা কেনার, ব্যাস মন খুশ। মানে পুজোআসছে ।
****
তারপর পুজো আসতো। আর এই সময় পুজোতে ঠাকুর দেখা দুদিন এগিয়ে গিয়ে ষষ্ঠিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। শুরুটা মোটামুটি হতো মাসির বাড়ি (শ্যামবাজারে) গিয়ে।মা, মাসি, দাদা,দিদিভাই সবাই মিলে উত্তর কলকাতা চড়ে বেড়ানো আর বাগবাজার থেকে শুরু করে আহিরীটোলা অব্দি হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখা যেন একটা বাঁধাধরা রুটিনের মধ্যে পরে গেছিলো । যোগ হয়েছিল আরোকিছু জিনিস। সপ্তমী পাড়ার চৈতালি দি, দেবলীনা দি, টুশি দি, দিদিভাই এর সাথে কখনো ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা, এন্তার ফুচকা, ঘুগনি, রোল বা বিরিয়ানি খাওয়া বা মণ্ডপে বসে ঠাকুরের মুখ ঘন্টার পর ঘন্টা দেখে যাওয়া। অষ্টমী, নবমী মধ্য কলকাতা আর দক্ষিণ কলকাতার দিকে রওনা হতাম। তখন বোসপুকুর হঠাৎ ই উদয় হয়েছিল মাটির ভাঁড়ের মণ্ডপ নিয়ে আর দক্ষিণ কলকাতার পুজোকে ঠাকুর দেখার লিস্ট এ হালকা করে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তাই দক্ষিণ কলকাতাটা নতুন সংযোজন ছিল। পুজোর সন্ধ্যেতে আলোর মাঝে, মণ্ডপের সারির ফাঁকে ফাঁকে, ঢাকের আওয়াজ ছাড়াও মাঝে মাঝে এই পাড়ার মাইক থেকে আশা ভোঁসলে - আর ডি বর্মনের কিছু অতিপরিচিত পুজোর গান ভেসে আসত বা ওই পাড়ার মাইক থেকে মহিষাসুরমর্দিনী ভেসে আসতো। পুজো যে কতটা জীবন্ত , বুঝতে শিখছিলাম। ক্যাপ ফাটানো টা হারিয়ে গেছিলো ইতিমধ্যে। এসেছিলো আরো একটা জিনিস, পুজোর দিন অনুযায়ী জামা পড়া ও ইস্টাইলে মেতে ওঠা। স্কুলের শেষের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি টাও শিখছিলাম ভালো করে। তারপর বিজয়ার নাচ গানের অনুষ্ঠানে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে মা দূর্গা কে টাটা করে দেয়া টাই খুব চলিত হয়ে গেছিলো। ভাসানের দিন শুধু হেসে হেসে বলতাম "আসছে বছর আবার হবে "।
Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy
No comments:
Post a Comment
Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .