।। শুভ তৃতীয়া ।।
কিভাবে শুরু করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। পড়তে পড়তে আবার এরকম না মনে হয় খুব একটা ঘ্যানঘ্যানে পোস্ট। বা এরকম না মনে হয়, যে এতো গতকালের অর্পিতা পালের লেখা থেকে ঝাপা। সত্যি বলতে অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছিলো এরকম একটা কিছু লিখবো , হয়ে উঠছিলো না জাস্ট। কাল অর্পিতা পালের আনন্দবাজারের লেখাটা পরে বেশ নাড়াচাড়া পড়লো। মনে হলো নাহ লিখেই ফেলি। মনে হলো, ঠিকই তো পুজোর রং তো বদলায় বছরের পর বছর। ছোটবেলার পুজোর সংজ্ঞা এখনের পুজোর সংজ্ঞার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। দিনের পর দিন সব বদলেছে। তাই ভাবলাম , একটু একটু করে আমার নিজের কিছু স্মৃতি যদি এখানে লিখতে পারি ব্যাপারটা মন্দ হয়না ।সত্যি বলতে, এই যে ব্যাপারগুলো ভাবছি তাতেও যেন আনন্দ হচ্ছে।তাহলে আবার কি ? পড়ুন। হয়তো আমার নিজস্ব কিছু স্মৃতির সাথে আপনারাও নিজের স্মৃতিও খুঁজে পাবেন।
আমার প্রথম পুজো তো অবশ্যই মনে নেই।কিন্তু এই ক্লাস ওয়ান বা ক্লাস টু এর পুজো গুলো মনে পরে।তখন আমরা থাকতাম অন্য একটা পাড়াতে।সেই স্মৃতি গুলোর স্বাদটা আলাদা আর অবশ্যই আর ফিরে আসেনি। মনে আছে, পুজোর আগের এক মাস থেকে মার মধ্যে একটা তোলপাড় দেখতে পারতাম। ঘর পরিষ্কার করার তাগিদ ।নতুন জামা কেনার তাগিদ। গিফট কেনার তাগিদ। নতুন সারিতে ফল লাগানোর তাগিদ। স্কুলের অর্ধ বাৎসরিক পরীক্ষার খাতা দেখার তাগিদ। সব রকমের তাগিদ। তারপর আসতো মহালয়া। ছোটবেলাতে সত্যি রেডিও তে কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না।জানতাম ও না বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কে ? কিন্তু দূরদর্শনে সংযুক্তা ব্যানার্জী কে মা দূর্গা রূপে দেখতে খুব ভালো লাগতো। ভাবতাম দূর্গা ঠাকুরকে মনে হয় এরকমই দেখতে। পুজোর ছুটি, পুজোর হোমটাস্ক, নতুন জামা, নতুন জুতো, নতুন ক্যাপ ফাটানোর বন্দুক আর টিভিতে ছুটি ছুটি এর বিজ্ঞাপন মিলিয়ে একটা অন্যরকম আনন্দ হতো ।
***
তখন আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে বারান্দা থেকে আমাদের বিরাটির সবচেয়ে পুরোনো ও বড়ো সার্বজনীন পুজো "ইয়ং রিক্রেয়েশন ক্লাব , কল্যাণ কো অপারেটিভ " এর প্যান্ডেলের চূড়া দেখতে পাওয়া যেত।মনে আছে, বারান্দা থেকে চূড়া দেখতে পাচ্ছি কিনা, সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম আমি আর দিদিভাই। যেই দিন দেখতাম, বাঁশের চূড়া দেখা যাচ্ছে, খুশিতে মন ভোরে যেত।মানে পুজো কাছে চলে আসছে।আর যখন দেখতাম কাপড় জড়ানো হয়ে গেছে চূড়াতে ,ব্যাস মন খুশ। তখন তো পুজো আর প্রথমা থেকে শুরু হতো না। তাই অনেক সময় দেখতাম ষষ্ঠীতেও প্যান্ডেল এর শেষ মুহূর্তের সাজগোজ চলতে। পঞ্চমী কি ষষ্ঠী নাগাদ মাইক সেট আপ হতো আর সেই চূড়াতে পড়তো তীব্র উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলন। মনে আছে, তখন কুমার শানুর কত যে সাগর নদী পেরিয়ে এলাম আমি ♫ আর কে বলে ঠাকুমা তোমায় ♪♪ এই দুটো গান খুব বাজতো মাইকে। তারপর সপ্তমী তে মার সাথে পুজো মণ্ডপে বসে পুজো দেখতাম আর ক্যাপ ফাটাতাম। মা, পাপার সাথে অষ্টমী ও নবমী ঠাকুর দেখতে বেরোতাম। অষ্টমীতে এই এয়ারপোর্ট এর পার্শ্ববর্তী ঠাকুর দেখা আর নবমী তে মোহাম্মদ আলী পার্ক, কলেজ স্কোয়ার আর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এর ঠাকুর দেখা, ফোসকা পায়ে বায়না ধরলে পাপার কোলে চড়ে ওঠা - এগুলো ছিল অত্যাবশ্যক। সেই পুজো কোথায়ে যেন চলে গেছে। সত্যি পুজো বদলে গেছে আর বদলাচ্ছেও। তাই নয় কি ?
মতামত প্ৰকাশ করতে ভুলবেন না।
পরের অংশ ক্রমশঃ প্রকাশ্য।
Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy
সুন্দর একটা বর্ণনা। যদিও আমার পুজো সেই ৬০ এর দশকে। উত্তর কলকাতার মানুষ। ষষ্ঠীর দিন একেই , ব্রাহ্মণ তার ওপর ঘটি বাড়িতে হতো নুচি তরকারি। সেদিন মধুসূদন বস্ত্রালয়ের ছিটের জামা। সপ্তমী তে সেই সময় একটা জলপাই রঙের পুলিশের জামা তাতে একটা ছোট বন্দুক লাগানো থাকতো। যদিও কোনোদিনই সেই জামা কিনে দেয় নি। তার বদলে বকলস্ দেওয়া একটা জামা জুটত , অষ্টমীর দিন জয়ভারত , গজকুমার , নিউ মার্কেটের শীলা এই সব দোকানের টেরিলিনের জামা অথবা হাতিবাগানের পদ্মা স্পোর্টস থেকে জামা কিনে দেওয়া হতো। নবমীতে ওই একই জামা। রাস্তায় বেরিয়ে খাওয়া দাওয়া ছিল দুর অস্ত। একটা কি বড়োজোর দুটো কোল্ড ড্রিংকস উঁচু করে তুলে তুলে দু চারটে ঢোঁক পাওয়া যেত। ছোড়দি একটু ডানপিটে ছিল অনেক টা বেশি খেয়ে নিত। দশমীর দিনে উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ার চোরবাগান এর মুক্তারাম বাবু স্ট্রীটের চ্যাটার্জি বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন গেলে কলাপাতায় লেখা হতো শ্রী শ্রী দূর্গার সহায়। দশমীর বড়ো আকর্ষণ ছিল জ্যাঠাইমার হাতে তৈরী ঘুগনি কুঁচো নিমকি নারকোল ছাপা বড়োজোর চন্দ্রপুলি ।
ReplyDeleteসেই সময় মাইকে হ্যালো মাইক টেস্টিং ওয়ান টু থ্রি গুনে গান চালানো হতো। প্রথমেই গোঁ গাঁ করে শব্দ আর জাপান লাভ ইন টোকিও অথবা লোলিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বলনা।
এমনি করে কয়েকটি বছর কেটে গেল। আর হাঁ সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল মা বাবা যদি সিনেমা দেখতে যেতেন। সেই দিনের মত ঠাকুর দেখার দফা রফা। আর বাবার এক মামিমা ছিলেন অষ্টমী বা নবমীতে ওনার মামার বাড়ি চোরবাগানের চাটুজ্জে বাড়িতে আসতেন। দুপুরে এসে সেই যে খাটে বডি ফেলতেন আর ওঠার নাম গন্ধ ছিল না। ঠাকুর দেখতে জাওয়ার বায়না করলে বলতেন যাও না বাবা চাটুজ্জে বাড়িতে গিয়ে আরতি দেখো।
এখন চাকরি করি মেয়ে বৌকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে যাই। অনেক নামিদামি রেস্টুরেন্ট খাওয়া দাওয়া হয়। দুচারটে পেগ ড্রিঙ্কস ও নিতে পারি। অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের জামা জুতো জোটে।
তাও ছোটোবেলার ফায়ার ব্রিগেড , কলেজ স্কোয়ারে সেই মাইকের আওয়াজ , " আপনারা আস্তে আস্তে এগিয়ে যান , আমাদের পুজো মন্ডপে ভীড় করবেন না... ইত্যাদি , অথবা অমুক জায়গা থেকে এসেছেন অমুক আপনার জন্য আপনার অমুক আত্মীয় আমাদের অনুসন্ধান অফিসে অপেক্ষা করছেন ..." আর মাঝে মধ্যেই জাপান লাভ ইন টোকিও বা লোলিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বলনা " ভেসে আসতো।
সেই ছাপোষা একটা কি দুটো কোল্ড ড্রিংকস ভাগ করে খাওয়া আর পুজোর ছুটির পর মিথ্যে কথা বলে বন্ধুদের মধ্যে কে কটা বেশি ঠাকুর দেখেছি বানিয়ে বানিয়ে সেই দিন গুলো হারিয়ে গেছে।
আপনার কমেন্ট পরে খুব ভালো লাগলো। আর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য। আমার বাকি লেখা গুলো ও পড়বেন অবশ্যই।
Delete