Wednesday 18 September 2019

পুজো মানে - ঘুড়ি লাটাইয়ের সাথে ছোট্ট সূচনা

আজ বিশ্বকর্মা পুজো। সকলকে জানাই তার শুভেচ্ছা, আমি কলকাতা তে নেই, কিন্তু আজ যে কলকাতা তে কি পরিস্থিতি তা আমি ভালো করেই  জানি।  আজ তো অটো  টোটো রিক্সা ভাইদের দিন। চারিদিকে হাজার একখানা পুজো, আলোর বাহার, রঙিন গান আর দেদার উল্লাস।  আর এই উল্লাসের সাথে সাথে কিন্তু সময় ভালো করে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে পুজোর আর মাত্র ১৪ দিন বাকি।  😁



আমার এই সংকলন টা শুরু করেছি কিন্তু একটু নস্টালজিক হবো বলে। সুতরাং, যদি আপনারা ভাবেন, এই মেয়েটা কি রে ভাই ! সর্বক্ষণ ছোটবেলা নিয়ে আদিখ্যেতা করে। তাহলে বলি, "শৈশবে  আর ফেরা যাবে নাতো নেই পথ নেই হারিয়ে গেছে সেই দেশ "। তা যাই হোক, লেখাটা শুরু করি।

নীল আকাশ, তুলোর মতন মেঘ আর মাঝে গুচ্ছ গুচ্ছ ঘুড়ি।  এই দৃশ্য আপনারা কত জন দেখেছেন আমি জানিনা। বিশ্বকর্মা পুজোর ঠিক ২-৩ সপ্তাহ আগের থেকে শুরু হয়ে যেত ছেলেদের কলরব। বিকেল ৪ টে থেকে সন্ধ্যা নামা অব্দি এই হুল্লোড়ের আওয়াজ আমাকে বাধ্য করতো ছাদে চলে যেতে। ছাদে দিয়ে দেখতাম অসংখ্য ঘুড়ি আকাশে উড়ছে। শুরু হয়ে যেত গোনা। কোন ঘুড়ি টা কাকে কাটছে আর সেই কাটা ঘুড়ির ভাব গতিক কোন দিকে এগোচ্ছে সেটা ছিল বেশি আকর্ষণীয়। কারণ যদি ঘুড়ি কেটে ছাদে পরে, ব্যাস কি মজা। কাটা ঘুড়ি কুড়িয়ে জমানোর আনন্দ অতুলনীয়। কখনো কখনো ছাদে যেতে একটু দেরী হয়ে গেলে একটা রোমহর্ষক কৌতূহল জাগতো।  পাছে কিছু ঘুড়ি পরে দেখতে পাই। এবং এমন টা হয়েছেও। আমি কিন্তু খুব হিংসুটে ছিলাম।  ছেলেপিলেরা বাড়ি খুঁজে পেলে ঘুড়ি চাইতে আসতো , আমি দিতাম না। মা জানলে অবশ্যই দিতে বাধ্য করতো সেটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু ঘুড়ি আমি দিতে চাইতাম না। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি ঘুড়ি ওড়ানোতে ওস্তাদ , কিন্তু সেটা একদম ভুল। চেষ্টা করিনি যে তা নয়, কিন্তু হয়ে ওঠেনি।


আমার পাপা ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালো পারেন, আবার বিভিন্ন রকম ঘুড়ি বানাতেও জানেন। তো, আমার অনুরোধে পাপা রবিবার দেখে আমাকে নিয়ে ছাদে উঠতো। ঘুড়ি ওড়াতো পাপা , আমি শুধু ঘুড়ি ছাড়তে সাহায্য করতাম আর লাটাই ধরে থাকতে সাহায্য করতাম । পাপা ঘুড়ি বানানো, ওড়ানো সবই শিখিয়েছিলো, কিন্তু  আমার দ্বারা হয়েনি।  আর আপনারাই বলুন, চারিদিকে যদি অট্টালিকার ভিড় থাকে, সেখান থেকে ঘুড়ি ওড়ানো যায় ??  তো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আমার ঘুম সক্কালে ভেঙে যেত তার অবশ্য যথাযথ কারণ ছিল।  আমাদের দোকানের পুজো থাকতো, তার জন্য তার আগের দিন থেকেই পাপাকে দেখতাম খুব ব্যস্ত থাকতে।  আমার শখ ছিল কাগজের শিখল বানানো, মার্বেল কাগজ দিয়ে সিংহাসন সাজানো আর আল্পনা দেয়া। তাই আমি ভোর থেকেই জেগে থাকতাম আর ভাবতাম আমাকে পাপা কখন নিয়ে যাবে।  আমি আগের দিন থেকেই শিখল বানিয়ে রাখতাম। একটু যখন বড়ো হলাম , মানে এই সপ্তম অষ্টম শ্রেণী, তখন আমার ভালোবাসা জাগলো পুজোর বাসনের উপর।  মায়ের সাথে আগের দিন থেকে বসে বাসন ও পুজোর সরঞ্জাম গোছাতে এগিয়ে যেতাম।  আর  সাথে সাথে মাথায় ঘন্টা বাজতো , যে দূর্গা পুজোর আর বেশি দিন নেই। বিশ্বকর্মা পুজো ছিল একটা জেন্টল রিমাইন্ডার যে উৎসবের মাস শুরু। ছিল বললে ভুল হবে, এখনো আছে কিন্তু কলকাতাবাসীদের জন্য।  এখানে তো কিছু ফ্যাক্টরি ছাড়া আর পুজো হয় না।

যদিও  ৯০% পুজো ১৭ই স্পেটেম্বরে হয়ে  থাকে, এই বছর একটু ব্যতিক্রম হলো।  এই ব্যতিক্রম যদিও এর আগে হয়েছে, তাও খুব বিরল। এখন তো বিশ্বকর্মা ঠাকুর ও এক সপ্তাহ থাকে কলকাতার প্যান্ডেলে।  আমি তার বিদ্রুপ করিও না।  মানুষ যত পারুক আনন্দে মেতে থাকুক না, দেখতেও ভালো লাগে আর নিজের মন টাও বেশ খুশি খুশি থাকে তবে  হ্যাঁ রাতের দিকে তারস্বরে মাইকটাকে বাদ দিয়ে 😎।

🔺🔻🔺🔻🔺🔻🔺🔺🔻

Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy

No comments:

Post a Comment

Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .