Sunday 15 September 2019

ছোট্টবেলার রং গোটা দুই চার - তৃতীয় পাতা

ছোট্টবেলার রং গোটা দুই চার ,
ছুটির দিন ,খালি বাড়ির উপহার 
খেলা ধুলা ,সাজগোজে রঙের বাহার 
শক্তিমান আর হাজমোলার মজার শনিবার 


ভাবলে মনে হয় , এই তো কিছু দিন আগের ঘটনা।  ঘুম থেকে ওঠা সকাল গুলো,  মা পাপার কাজে বেরোনোর অপেক্ষা , আমার আর দিদিভাইয়ের মজা গুলো সব এখনো চোখে দেখতে পারি। কেমন যেন মরীচিকার মতন, মনে হয় এইতো  খুব নিকটবর্তী কিন্তু ধরা যায় না। তখন পেরিয়ে আসা বছর গুলো চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে  দেয়, যে  তুই এখন আর ছোট নেই।  ছোট্টবেলা পেরিয়ে এসেছিস।  হা: হা: ।

তা যাক গে  এই সব বড়ো  হয়ে  যাওয়ার  দুঃখের অনুভূতি।  ছোট্টবেলার কিছু মুহূর্ত আমি আপনাদের বলি। মোটামুটি বোনেদের মধ্যে এগুলো খুব স্বাভাবিক। আপনাদের মধ্যে যদি এমনা কেউ থাকেন যাঁরা  ছোটবেলা দিদি বা বোনের সাথে কাটিয়েছেন, তাদের হয়তো  বেশ মজা লাগবে।  আমি আর আমার দিদিভাই হলাম মানিকজোড়।  ঝগড়া ঝাঁটি হতো  ঠিকই , কিন্তু দিদিভাই আমার মাথার উপর ছত্রছায়ায় মতন থাকতো সবসময় , এখনো তাই.। আমার দ্বিতীয় মা।  তো আমাদের জন্য শনিবার টা একটা বিশেষ দিন ছিল।  আমার চতুর্থ শ্রেণী  পড়া  অব্দি এইটা ছিল প্রতি শনিবারের রুটিন।  শনিবার মা পাপা দুজনেই  কাজে বেরোতেন, আর আমরা দুজনেই বাড়িতে থাকতাম।  মা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হতো শক্তিমান দেখার ধুম।  সে যে কি আনন্দ ৯০ দশকের  ছেলেপিলেরা বুঝবে। দিদিভাই মাঝে মাঝে পাড়ার বিচিত্রা মুদি দোকান থেকে ১ টাকায়  ৭ টা হাজমোলা  নিয়ে আসতো।  আমরা ৩.৫ করে ভেঙে খেতাম আর শক্তিমান দেখতাম।

তারপর হতো আমাদের রান্নাঘরের আসর শুরু।  কেমন রান্নাঘর ? খেলার রান্নাঘর। টিভি তে যেমন ভাবে মহিলারা রান্না শেখাতো, সেই অনুকরণে ডাইনিং টেবিলের উপর সমস্ত কাঁচের ও চীনা মাটির বাসন নামিয়ে  শুরু হতো আমাদের দুই বোনের রান্না রান্না খেলা। আমি হতাম সঞ্চালিকা আর দিদিভাই হতো রাঁধুনি। বলে রাখি আমার দিদিভাই ছোটবেলা থেকে দুর্দান্ত মিমিক্রি করে, ও তখন হিন্দি তে খুব সুন্দর নকল করে করে রান্না শেখাতো।  ঠিক যেমন দূরদর্শন ন্যাশনালের মহিলারা করতো। কি রেসিপি দিতো আমরা কেউ জানিনা। শুধু অভিনয় করতাম। হা হা। এমন হয়েছে কয়েকবার বাস্তব সামগ্রী নিয়ে তেল, গ্যাস ছাড়া রান্না করতে গিয়ে সমস্ত রন্ধন সামগ্রী দিয়েছি নষ্ট করে আর মায়ের বাড়ি  ফেরত আসার পর দুমাদ্দুম  মার্  আর বকুনি খেতে হয়েছে। 

এছাড়াও আমাদের থাকতো আরেকটা খেলা, সাজগোজ করে  মায়ের শাড়ী আলমারি থেকে নামিয়ে পরে ঘুরে বেড়ানো। স্কেচ পেন দিয়ে নেলপলিশ, মুখে পাউডার আর একটু লিপস্টিক।  মনে আছে, মায়ের স্কুল শনিবার হাফ ডে হতো, ১:৩০  টা থেকে ২ ট র মধ্যে মা যেই কলিং বেল বাজাতো, হুটোপুটি করে শাড়ী খুলে, মুখের লিপস্টিক মুছে দরজা খুলতে যেতাম, অনেকসময় গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে দরজা খুলে দিতাম।  মা যে বুঝতো না তা নয়, বুঝতো বটেই।  হয়তো কখনো কখনো মাফ করে দিতো। মাকে আমরা দুজনেই খুব ভয় পেতাম  আর এখন মা হয়ে গেছে ডার্লিং  বেস্ট ফ্রেন্ড। 



এই সব দিন বড্ডো মনে  পড়ে।  ২০ বছরের ও বেশি।  কি করে যে কেটে গেলো টের পাওয়া যায়নি।  আপনাদের ও নিশ্চই থাকবে , যদি মনে করেন, শেয়ার করুন।




Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy

No comments:

Post a Comment

Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .