Saturday, 1 February 2014

হারানো বিকেল .... The lost end of day

আজ আনন্দবাজার পত্রিকায়ে 'পত্রিকা' বিভাগে সমরেশ মজুমদারের একটি প্রচ্ছেদ পড়লাম। প্রচ্ছেদটি পড়ে আমার মন কিছুটা হলেও নস্টালজিয়াতে ভরে উঠলো। 'বিকেলের মৃত্যু রাতের জন্ম' ছিল এই প্রচ্ছেদটির মূল বিষয়।

 

আমি এই জেন Y গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হলেও আমি কোথায়ে যেন আমার কোন একটা সময়ের মিল খুঁজে পেলাম বক্তার ভাবানুরাগের সঙ্গে। তা সত্যি বটে , রাত থেকে মধ্যরাত যত গভীরতর হয়ে ওঠে, আমাদের জেগে থাকার প্রবণতা যাচ্ছে বেড়ে। যেই রাত ১২টা ছোটবেলায়ে অতিসীম মনে হত,তা এখন মনে হয়ে স্বাভাবিক আর বক্তার ভাবের মতন আমিও বিকেলকে ফেলেছি হারিয়ে। 
 একসময় বিকেল ছিল আমারও খুব প্রিয।আর শেষবারের মতন বিকেল্ কে নিয়মমাফিক প্রতিদিন উপভোগ করেছিলাম যখন আমি X এ পড়তাম। তারপর যেন কোথায়ে সেই বিকেলবেলার দিনগুলোকে হারিয়ে ফেললাম। লেখক সমরেশ মজুমদার যেমন বললেন "হাতে মাত্র দেড় ঘন্টা", আমার কাছেও ছিল সেই মাত্র দেড় ঘন্টাই। স্কুল থেকে ফিরে মায়ের বারা ভাত খেয়ে দৌড়ে চলে যেতাম আমার ছোটবেলার বন্ধু প্রিয়াঙ্কার বাড়ি। প্রিয়াঙ্কার বাড়ি যাবার মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ ছিল। আর সেই আনন্দের একমাত্র আকর্ষন ছিল 'কালো ছাই'।ওর বাড়ির পিছন দিয়েই যাওয়া যেত সেই কালো ছাইয়ের মাঠে।সীমাহীন দৌড়,ছোটখাটো ক্রিকেট ,ছোঁয়াছুই, কাঁদায়ে দাপাদাপি ও ঘুরে বেড়ানো ছিল আমাদের প্রতিদিনের রুটিন। খুব খারাপ লাগত যখন সন্ধ্যা নামত। কারণ আমাকে আমার বাড়ি ফিরে আসতে হত। আর এসে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসতে হত।কখনো কখনো আবার প্রিয়াঙ্কা আসত আমার বাড়ি। যেদিন প্রিয়াঙ্কার কোনো অসুবিধা থাকত, চলে যেতাম পাশের পাড়ার পার্কে। খেলতাম আমার থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে। চড়তাম আমার প্রিয় দোলনা, একটুর জন্য হলেও ওড়ার অবকাশ পেতাম।ধুলোয়ে মেখে ফিরতাম বাড়ি। সেই বিকেলের পড়া সোনালী রোদ, গরম কালের হাওয়া,সুতির ফ্রক,পাউডারের গন্ধ আর প্রানখুলে খেলার আনন্দ আজ চাইলেও পাই না।কোথায়ে গেল সেই মাথায়ে কাঁটা ফুল গুঁজে রাজকুমারী সাজা,কোথায় গেল জংলি গাছের ফাঁকা ডাটা দিয়ে সাবানের জলের বুদবুদ ওড়ানো,কোথায় গেল ছাদের পাঁচিলে দাড়িয়ে নিজের সবচেয়ে প্রিয় ওরনা ওড়ানো, জানি না। 




আবার যখন একটু  বড় হলাম, যখন প্রতিনিয়ত বিকেল গুলোকে পেতাম না টিউশন ক্লাসের জন্য, তখনের বিকেলবেলা গুলোকে খুঁজে পেলাম লেখকের লেখা "অবিবাহিত তরুনীরা উদাস ভঙ্গিতে আকাশ দেখছেন অথবা বুঝতে না দিয়ে পাশের ছাদের কোনও তরুণকে " - এই লাইন থেকে। তখন ছাদের মধ্যে মাদুড় পেতে শুয়ে সাদা আকাশ দেখতাম। মেঘ গুলোকে জুড়ে কিছু দেখার চেষ্টা করতাম। কখনো  দেখতাম এটা বা ওটা। আবার বিশ্বকর্মা পুজোর আগে  ঘুড়ি গুনতাম। দু-একটা কেটে পড়লে উঠে পড়তাম সেগুলো ধরার আশায়ে।ঘুরে বেড়াতাম পুরো ছাদটাকে। দেখার চেষ্টা করতাম ওই অনেক দূরের যে ছোট ছোট বাড়ি গুলো দেখা যেত, তার মধ্যে কোনো মানুষকে।খুব অদ্ভূত হলেও বিস্বয়কর লাগত।তাঁদেরকে নড়তে চড়তে দেখলে আরো খুশী হতাম।যাকে বলে thrilling একটা ব্যাপার।খুব মজা লাগত। দেখতাম আকাশের শেষ প্রান্তের কারখানার ধোঁয়াগুলোকে মিলিয়ে যেতে।আস্তে আস্তে পাখিগুলো ফিরতে আরম্ভ করত, পেঁচা গুলো আবছা আলোয়ে ডাকতে আরম্ভ করত ও সন্ধ্যা নেমে আসত।ব্যাস,বিকেল জানাত বিদায়। 


এখন সেই বিকেল ফুরিয়ে যায়ে কখন টেরও পাইনা বদ্ধ অফিসের কড়া টিউবের আলোয়ে। সেইজন্যেই বোধ হয লেখন বলেছেন "বিকেলের মৃত্যু ,রাতের জন্ম" - রাতই তো এখন একমাত্র নিজের আপন সময় তাই না? যখন নিজেকে খোলা আকাশে না মেললেও, মেলতে পারি সারা দুনিয়ার কাছে একটা বদ্ধ ঘরে --- virtual আকাশে। 




Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy

No comments:

Post a Comment

Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .