Tuesday, 24 September 2019

জ্যান্ত দুর্গার সংসার

এই লেখাটা লিখেছিলাম আজ থেকে সাড়ে পাঁচ বছর আগেই, জানুয়ারি ২০১৪ সাল। লিখেছিলাম কোনো সংবাদ পত্রের  লেখনী প্রতিযোগিতার জন্য, আদৌ চিঠি পৌঁছেছিল কিনা আমি জানি না আর যদি পৌঁছে গিয়েও থাকে, তাহলেও হয়তো খবরের পাতায় প্রকাশ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি।  তাই এই লেখা গুলো 'অপ্রকাশিত' রয়ে গেছে।  এরকম অনেক গল্প বা লেখনী আছে যা আমি এই 'অপ্রকাশিত' সংকলনে যোগ করতে চলেছি। আজকের প্রথম লেখা যেটা আমি যোগ করছি সেটা একটা সূত্রের উপর ভিত্তি করে লেখা।  বিভাগ - হাস্য কৌতুক। যেহেতু পুজো কাছে, তাই এইটা দিয়েই শুরু করলাম।



গল্পের বিভাগ : হাসি 


গল্পের সুত্র : "আজ দশমী। এবার আমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুর। মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গণেশ, বলিউড এর স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন্ মিনি..... "

আজ দশমী। প্রতিবারের মতন এবারেও আমাদের পাড়ার হাল একটু বেহাল। উপহাস্য নয়। আসলে থিম পূজোর থিম মগজ থেকে ঠিকরে না বেরোবার ফলে আমাদের পূজোর 'গরম' ও 'টগবগে' থিম হল লাইভ ঠাকুর। অনেক চেষ্টা করেও এত বছরেও একটা 'অমুক' কিংবা 'তমুক' সম্মান পাওয়া যায়েনি।দেখা যাক আজ এই শেষ দিনে যদি মা যেতে যেতে আচমকা কিছু দিয়ে যান।

মাকে খুশি করার জন্য আমাদের পাড়ার ছেলে পিলেরাই হয়ে গেছে মা ও তার পরিবার বৃন্দগন। মোড়ের মিষ্টির দোকানের পেটফোলা ময়রা হয়েছে গণেশ । নকল ফর্সা শুঁড় ও কালো চকচকে ভুঁড়ি দুলিয়ে ভালই অভিনয় করলো এই কদিন। ওদিকে বলিউড এর স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছে কার্তিক। ধনুক তো দূরের কথা, নেই একটা নকল বন্দুকও। ট্যাবলেট হাতে কানে আশিকী ২ এর গানে মত্ত হয়ে ফেইসবুক করে করেই এই চারটে দিন কাটিয়ে দিল গোঁফহীন প্যাংলা কার্তিক। ভাগ্যিস নামটাই মেলে রোশন পুত্রের সাথে। চেহারা মিললে মা দূর্গা ই জানতেন এই মন্ডপ বেদিতে কি হত। ঐ দিকে পাড়ার ধক ধক হার্টথ্রব চিনির বোন্ মিনি হয়েছে লক্ষী। নামেই মিনি। আকারে বিশাল মিনির পুরুষালি হাবভাব মা লক্ষী না দেখলেই ভালো হয়। আর যদি দেখেও থাকেন তাহলে - " মা লক্ষী - এদের দোষ নিস না । এঁরা নিরুপায়। কথা দিছি আসছে কোজাগরী তে তোকে সুন্দর করে পুজো করব এই বেদীতেই "। যাক এইবার আসি সঙ্গীতের দেবী সরস্বতী এর আলোচনায়ে। পাড়ার মেয়েদের অভাবকে টেক্কা দিয়ে পাড়ার হাড়ুই হয়ে গেছে সরস্বতী। পরচুলা, লোমশ লম্বা চেহারায়ে স্মার্ট সরস্বতী বাজিয়েছে গিটার। সোজা কথাযে সরস্বতী অন ছিল। যাকে বলে বেপরোয়া।


ছবি : মহিষাসুর বধ পালা / আনন্দবাজার পত্রিকা 

এত গেল সন্তানদের বর্ণনা। আসছি মা ও তার একমাত্র ভিলেন অসুরের বর্ণনাতে। মা দূর্গা হয়েছে আমাদের পাড়ার ঝগরুটে আপেল পিসি। কিন্তু এটা মানতে হবে যে তাঁর রাগী পাকানো চোখের সাথে হিংস্র আবেদন সত্যি তাঁকে মহিষাসুরমর্দিনী করে তুলেছে। দুই হাতে নকল ত্রিশুল, আর বাকি আটটি নকল হাতের একটি হাতের আঙ্গুল খসে পড়েছে। আর আঙ্গুলেরই বা কি দোষ ? থার্মোকলের হাত এই চারদিন টিকেছে এই ঢের। চশমা পরা মা দূর্গাকে শতকোটি পেন্নাম। এই দিকে অসুর হলো গিয়ে চালের দোকানের চাঁদু। চাল বিক্রি করে গতরটা বেশ ভালই ভারী করেছে। তাই বলবান হ্যান্ডসাম অসুরের জায়েগাতে মাংসালো থলথলে চেহারাটা খুব একটা হাস্যকর হয়েনি। একটু বডি বিল্ডিং এর অভাব ব্যস। যাই হোক চাঁদু বাবার চালের দোকান থেকে এই চারটে দিন রেহাই পেয়ে বেজায়ে খুশি। তাই অসুর একদম হাসমুখলাল।

বাহনের কথা বাদই দিলাম কারণ জ্যান্ত কেউ নয়ে, সবাই নকল পুতুল। তাতে কি যায়ে আসে। কাজ তো চলে গেল। কিন্ত হাঁ আমাদের পাড়ার পুজো কোনো দর্শনার্থীকে হতাশ করেনি। কোনো অ্যাওয়ার্ড না পেলেও আমাদের পুজো দর্শনার্থীদের কে দিতে পেরেছে এক চিলতে হাসি। কাতারে কাতারে লোক না হলেও বেশ সংখ্যক দর্শনার্থী হয়েছে, আবার কেউ কেউ হাসার সাথে সাথে প্রনাম ও করেছেন আমাদের ভগবান দের।

'মা দূর্গা' - এবারের মতন ক্ষমা করিস। কথা দিলাম আগামী বছর তুই আসবি কুমোর পাড়া থেকেই। এবারের ভুলত্রুটি মার্জনা করিস আর হাশি মুখে শ্বশুর বাড়ির জন্য রওনা দিস ।

সৌজন্যে --
প্যাট্লা রতন 
আসিস্টান্ট সেক্রেটারী 
মিলেঝুলে থাকি ক্লাব
ঝাউতলা পার্ক 
কলকাতা- ৭০০০০০







Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy

No comments:

Post a Comment

Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .