তিন বছর আগে লিখেছিলাম রং বদলানো পুজো নামক একটি সংকলন। তাতে পুজো সম্পর্কিত অনেক আবেগ অনুভূতির ব্যাপারে লিখেছিলাম। অনেক দিন হলো ব্লগ লিখিনি। মানে এখন আগের মতন লেখাই হয়না। এখন এই মুহূর্তে আমার আবার ইচ্ছা করলো লেখা শুরু করার। পুজোর গুনে গুনে আর ১৬ দিন বাকি, তাই এখন আবেগ টগবগ করে ফুটছে আর লেখার জন্য হাত শুঁড়শুঁড়ি করছে। বাঙালির কাছে পুজো মানে শুধু পুজো ও ভক্তি না, তার সাথে থাকে আরো অনেক আনুসাঙ্গিক আনন্দের জিনিস। আর সেই আনন্দ শুরু হয়ে যায় প্রায় ২ মাস আগে থেকে।
তা শুরু করছি পুজোর জামা দিয়ে। হা হা , গুঁড়ো থেকে বুড়ো , পুজোর জামা কিন্তু অত্যাবশ্যক এবং একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পুজোর সূচনা। যদিও ছোটবেলার পুজোর জামা থেকে এখনের পুজোর জামার সংজ্ঞা অনেক বদলেছে, তাও 'কটা পুজোর জামা হল ' এই ভাবনার মধ্যে কিন্তু কোনো বদল আসেনি। ছোটবেলার মতন কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করার নেই, বা স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে জামার গুনতি দেখানোর মতন ইচ্ছা নেই, কিন্তু মনে মনে একটা গুনতি চলতেই থাকে। তা ছোটবেলা থেকেই শুরু করছি।
মনে আছে, পুজোর ছুটির আগেই ছিল অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার একটা কাঁটা তারের বেড়া। তাই অগত্যা পড়তে বসতেই হতো। কিন্তু এই পুজোর এক দেড় মাস আগে থেকেই শুরু হতো পুজোর জামার আমদানি 😁। একটু অসময় কলিং বেল বাজলেই ছুট্টে চলে যেতাম বারান্দায়,দেখতাম কে এসেছে। যদি দেখতাম কেউ অতিনিকট আত্মীয় এসেছে আর হাতে বড় বড় প্যাকেট , তাহলেই কেল্লাফতে। চুপচাপ পড়ার ভান করতাম আর অপেক্ষা থাকতো, কখন ডাক পড়বে জামার ফিটিং মাপার জন্য। যেই না ঘরের দরজা মা খুলতো আর বলতো একটু আয়ে, মন টা ফুরফুরে হয় যেত, কিন্তু নিজের আবেগ উচ্ছাস চেপে রেখে মৃদু একটা হাসি আর লজ্জার রেখা মুখে ধরে রেখে যেতাম আর দেখতাম আমার পুজোর নতুন জামা। সেই দিন টা হালকা করে আমার মনের দরজায় কড়া নেড়ে বলতো , পুজো আসছে। আর শুরু হতো গুনতি। একটা,দুটো,তিনটে, চারটে আরো অনেক। এতো গেলো, জামার আমদানি। তারপর হতো , মা পাপার পুজোর শপিং। এর ব্যাপারে আগেও লিখেছি রং বদলানো পুজোর কোনো একটা লেখনী তে। যেই শুনতাম মা পাপা ঠিক করেছে কোনো এক রবিবার নিউ মার্কেট যাওয়া হচ্ছে, ব্যাস , তার মানে পুজো একদম নিকটবর্তী। এইটা স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষা শেষের পর হতো। সেই দিনটাই একটা উৎসবের মতন লাগতো। সারাদিন ঘুরে ঘুরে জামা,জুতো কেনাকাটা আর ভালো রেঁস্তোরায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া। তখন আমিনিয়ার বিরিয়ানি আমার খুব ভালো লাগতো। ২০ বছর আগের কথা বলছি, সেই কেবিনের মধ্যে বসে বিরিয়ানি খাওয়া আর মা পাপার হাতে প্রচুর নতুন প্যাকেট দেখতে পাওয়ার আনন্দের তুলনা নেই। এই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দ গুলো শপিং মলে বা অনলাইনে কিনে আর কই আসে ? তাই না। এছাড়াও থাকতো আরেকটা দিন যেখানে মা শুধু আমাদের কে নিয়ে বেরোতো উপহার কেনার জন্য আর তারপরেই চলতে থাকতো মা আর পাপার পুজোর জামা দেওয়ার হিড়িক। এই দেয়া নেয়া র মধ্যে যেই আনন্দ ও উচ্ছাস জড়িয়ে থাকতো সেটা অতুলনীয়। 😇
এরপর যখন একটু বড় হতে লাগলাম, তখন পুজোর জামার আমদানি গুলো বদলে হলো টাকার আমদানি , পাছে আমাদের জামা পছন্দ না হয়। কিন্তু আমার কখনোই এটা ভালো লাগতো না , টাকার মধ্যে ওই আবেগ বা ভালোবাসা টা পেতাম না, হয়তো যিনি দিচ্ছেন তার পছন্দকে সম্মান জানানোর সুযোগ পাওয়া যেত না বলে কেমন মেকি লাগতো । উপহারের কোনো পছন্দ বা অপছন্দ হয়না। তাই না ? ভালোবাসাটাই আসল। সেই যাই হোক, এই রীতি এখনো চলছে। এবং অনেকেই এতে বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন (আমি একদম করিনা)। জামা না পেলেও, "কিছু কিনে নিও" এখনো বিদ্যমান।
এখন এই গত ৫-৭ বছর ধরে অনলাইন শপিং এর হিড়িকে সারা বছর ধরেই জামা, শাড়ী কেনা হচ্ছে। আগের মতন কোনো বিশেষ সময় লাগেনা। আগে যেমন পয়লা বৈশাখ আর দূর্গা পূজা হতো জামা কেনার আসল সময়, এখন ১২ মাস ধরেই চলছে কেনাকাটা। তো চাকরি পাওয়ার পর, এই অনলাইন শপিং টা অতিরিক্ত বেড়ে গেলো। পুজোর এক-দেড় মাস আগে যেগুলো কেনা হচ্ছে, সেগুলো পুজোর জন্য বরাদ্দ করে আবার গুনতি হতো শুরু। এই গণনা কিন্তু শুধু মনে মনে , এই ধেড়ে বয়সে কেউ তো আর জিজ্ঞেস করবেনা , খুকী , কটা জামা হলো? আমাকে একটা দেবে ? 😂 তাও অতিরিক্ত কাছের কোনো বন্ধু জিজ্ঞেস করলে তখন বলা চলতো। হা হা। এইটা এখনো চলছে আর হয়তো চলবেও।
কিন্তু মা পাপা দিদিভাই এর কোটা টা এখনো বিদ্যমান। আর সেই পুজোর জামা মনে করিয়ে দেয় , পুজোর রং বদলালেও পুজোর ভাব টা একই আছে।
তা আপনার পুজোর কটা জামা হলো ?😛
Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy
তা শুরু করছি পুজোর জামা দিয়ে। হা হা , গুঁড়ো থেকে বুড়ো , পুজোর জামা কিন্তু অত্যাবশ্যক এবং একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পুজোর সূচনা। যদিও ছোটবেলার পুজোর জামা থেকে এখনের পুজোর জামার সংজ্ঞা অনেক বদলেছে, তাও 'কটা পুজোর জামা হল ' এই ভাবনার মধ্যে কিন্তু কোনো বদল আসেনি। ছোটবেলার মতন কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করার নেই, বা স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে জামার গুনতি দেখানোর মতন ইচ্ছা নেই, কিন্তু মনে মনে একটা গুনতি চলতেই থাকে। তা ছোটবেলা থেকেই শুরু করছি।
মনে আছে, পুজোর ছুটির আগেই ছিল অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার একটা কাঁটা তারের বেড়া। তাই অগত্যা পড়তে বসতেই হতো। কিন্তু এই পুজোর এক দেড় মাস আগে থেকেই শুরু হতো পুজোর জামার আমদানি 😁। একটু অসময় কলিং বেল বাজলেই ছুট্টে চলে যেতাম বারান্দায়,দেখতাম কে এসেছে। যদি দেখতাম কেউ অতিনিকট আত্মীয় এসেছে আর হাতে বড় বড় প্যাকেট , তাহলেই কেল্লাফতে। চুপচাপ পড়ার ভান করতাম আর অপেক্ষা থাকতো, কখন ডাক পড়বে জামার ফিটিং মাপার জন্য। যেই না ঘরের দরজা মা খুলতো আর বলতো একটু আয়ে, মন টা ফুরফুরে হয় যেত, কিন্তু নিজের আবেগ উচ্ছাস চেপে রেখে মৃদু একটা হাসি আর লজ্জার রেখা মুখে ধরে রেখে যেতাম আর দেখতাম আমার পুজোর নতুন জামা। সেই দিন টা হালকা করে আমার মনের দরজায় কড়া নেড়ে বলতো , পুজো আসছে। আর শুরু হতো গুনতি। একটা,দুটো,তিনটে, চারটে আরো অনেক। এতো গেলো, জামার আমদানি। তারপর হতো , মা পাপার পুজোর শপিং। এর ব্যাপারে আগেও লিখেছি রং বদলানো পুজোর কোনো একটা লেখনী তে। যেই শুনতাম মা পাপা ঠিক করেছে কোনো এক রবিবার নিউ মার্কেট যাওয়া হচ্ছে, ব্যাস , তার মানে পুজো একদম নিকটবর্তী। এইটা স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষা শেষের পর হতো। সেই দিনটাই একটা উৎসবের মতন লাগতো। সারাদিন ঘুরে ঘুরে জামা,জুতো কেনাকাটা আর ভালো রেঁস্তোরায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া। তখন আমিনিয়ার বিরিয়ানি আমার খুব ভালো লাগতো। ২০ বছর আগের কথা বলছি, সেই কেবিনের মধ্যে বসে বিরিয়ানি খাওয়া আর মা পাপার হাতে প্রচুর নতুন প্যাকেট দেখতে পাওয়ার আনন্দের তুলনা নেই। এই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দ গুলো শপিং মলে বা অনলাইনে কিনে আর কই আসে ? তাই না। এছাড়াও থাকতো আরেকটা দিন যেখানে মা শুধু আমাদের কে নিয়ে বেরোতো উপহার কেনার জন্য আর তারপরেই চলতে থাকতো মা আর পাপার পুজোর জামা দেওয়ার হিড়িক। এই দেয়া নেয়া র মধ্যে যেই আনন্দ ও উচ্ছাস জড়িয়ে থাকতো সেটা অতুলনীয়। 😇
এরপর যখন একটু বড় হতে লাগলাম, তখন পুজোর জামার আমদানি গুলো বদলে হলো টাকার আমদানি , পাছে আমাদের জামা পছন্দ না হয়। কিন্তু আমার কখনোই এটা ভালো লাগতো না , টাকার মধ্যে ওই আবেগ বা ভালোবাসা টা পেতাম না, হয়তো যিনি দিচ্ছেন তার পছন্দকে সম্মান জানানোর সুযোগ পাওয়া যেত না বলে কেমন মেকি লাগতো । উপহারের কোনো পছন্দ বা অপছন্দ হয়না। তাই না ? ভালোবাসাটাই আসল। সেই যাই হোক, এই রীতি এখনো চলছে। এবং অনেকেই এতে বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন (আমি একদম করিনা)। জামা না পেলেও, "কিছু কিনে নিও" এখনো বিদ্যমান।
এখন এই গত ৫-৭ বছর ধরে অনলাইন শপিং এর হিড়িকে সারা বছর ধরেই জামা, শাড়ী কেনা হচ্ছে। আগের মতন কোনো বিশেষ সময় লাগেনা। আগে যেমন পয়লা বৈশাখ আর দূর্গা পূজা হতো জামা কেনার আসল সময়, এখন ১২ মাস ধরেই চলছে কেনাকাটা। তো চাকরি পাওয়ার পর, এই অনলাইন শপিং টা অতিরিক্ত বেড়ে গেলো। পুজোর এক-দেড় মাস আগে যেগুলো কেনা হচ্ছে, সেগুলো পুজোর জন্য বরাদ্দ করে আবার গুনতি হতো শুরু। এই গণনা কিন্তু শুধু মনে মনে , এই ধেড়ে বয়সে কেউ তো আর জিজ্ঞেস করবেনা , খুকী , কটা জামা হলো? আমাকে একটা দেবে ? 😂 তাও অতিরিক্ত কাছের কোনো বন্ধু জিজ্ঞেস করলে তখন বলা চলতো। হা হা। এইটা এখনো চলছে আর হয়তো চলবেও।
কিন্তু মা পাপা দিদিভাই এর কোটা টা এখনো বিদ্যমান। আর সেই পুজোর জামা মনে করিয়ে দেয় , পুজোর রং বদলালেও পুজোর ভাব টা একই আছে।
তা আপনার পুজোর কটা জামা হলো ?😛
🔺🔻🔺🔻🔺🔻🔺🔺🔻
Posted By Debarati Datta Read about me here blogging since 2011 Copyright © Debarati Datta Privacy Policy
No comments:
Post a Comment
Thanks for reading the post and if you like it then don't forget to fill a comment and send that to me .